King’s ইন্সপাইরেশনাল টকস

King’s ইন্সপাইরেশনাল টকস

আমাদের লাইফ সাইন্স এন্ড মেডিসিন ফ্যাকাল্টি এর উদ্যোগে প্রায়ই “ইন্সপাইরেশনাল টকস” আয়োজন হয়। এটার আরেকটা নাম হলো “Inaugural Lectures”! মানে হলো, এই ফ্যাকাল্টিতে যারা প্রফেসর পদে প্রমোশন পায় তাদের থেকে ২ জন কে নিয়ে একটি করে সেশন আয়োজন করে। পর্যায়ক্রমে যা চলতে থাকে।

আসুন আমাদের ফ্যাকাল্টির কিছু পরিসংখ্যান দেখে নিই। প্রায় ৩০ টির মত ডিসিপ্লিন এ ডিগ্রী দেওয়া হয়। আছে ৫০০০ আন্ডারগ্র্যাজুয়েট শিক্ষার্থী এবং ১৫০০ পিএইচডি গবেষক। সবার সাপোর্ট এর জন্য আছেন ২০০০ এর মত স্টাফ যায় মধ্যে ৫০০ এর মতো ফ্যাকাল্টি মেম্বার। তাদের মধ্যে প্রফেসর আছে প্রায় ১৫০ এর কিছু বেশি।

এই আয়োজনের উদ্দেশ্য সর্বোচ্চ একাডেমিক পদে উন্নীত হতে যে উদ্যম, পরিশ্রম আর অনুপ্রেরণা প্রয়োজন তা এক একজন কিভাবে এবং কোথায় পেয়েছে সেই সব গল্প বিনিময় করা। যাতে আরও অনেকে মানুষের জন্য কিছু করতে উৎসাহ পায়!

আমার জন্য আজকেরটি ছিল দ্বিতীয় সেশন! বক্তা দুইজন, প্রফেসর পাবলো লামাতা এবং আমার সুপারভাইজার, প্রফেসর মিরাজ রহমান!

প্রফেসর পাবলো
শুরুতেই বক্তব্য দিতে আসেন প্রফেসর পাবলো। যার পড়াশোনা স্পেনের জারাগোজা এবং মাদ্রিদে। তারপর সিমেন্স হয়ে অক্সফোর্ড এ একাডেমিক জীবন শুরু ২০০৯ সালে! সবশেষে কিংস কলেজ এ কাজ শুরু করেন ২০১২। প্রফেসর হয়েছেন সম্প্রতি, সেটার উদযাপনের জন্যই আয়োজন আজকের লেকচার।

প্রফেসর তার অভিজ্ঞতা থেকে দুইটি জিনিস শেয়ার করেছেন। এক, “ধন্যবাদ জ্ঞাপন” এবং দুই, “অনুপ্রেরণা খুঁজে পাওয়া”। উনার স্লাইডে ছিল প্রচুর মানুষের ছবি। যারা সবাই ছিল কোন না কোন বয়সে উনাকে সাহায্য করেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন, সাহস আর অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন।

শুরুতেই হতে চেয়েছিলেন ট্যাক্সি ড্রাইভার! কারণ উনার কাছের বন্ধুর সঙ্গ ছিল সবেচেয়ে আরাধ্য! তারপর একে একে তুলে এনেছেন পরিবারের অনেক সদস্য, স্কুল-কলেজ এর শিক্ষক, বিশ্ববিদ্যালয় এর মেন্টর, সুপারভাইজার, ক্লিনিক্যাল কলাবরেটর, বাবা, সহকর্মী! কে নেই!

তিনি জীবনে যা সবচেয়ে কার্যকরী জিনিস শিখেছেন তা হলো “হাসি”। উনি এক প্রফেসর কে দেখেছিলেন যিনি সেই বিভাগের একজন অধ্যাপক কে যেভাবে সম্মান করে হাসি বিনিময় করেন, ঠিক সেই একই সম্মান মিশ্রিত হাসি দেন ক্লিনারকে যিনি দিনশেষে শ্রেণীকক্ষের আবর্জনা পরিষ্কার করে!

May be an image of food
প্রকৃতিতে পাওয়া ফ্র্যাক্টাল Romanesco broccoli!

প্রফেসর বক্তব্য শেষ করেছেন নাটকীয় ভাবে ফ্র্যাক্টাল, স্ব-সাদৃশ্য বা পুনরাবৃত্তি প্যাটার্ন আছে এমন অর্থাৎ একটি ক্ষুদ্র অংশ যেমন তা পুরো অংশের মতো একই রকম, এর উদাহরণ দিয়ে! উনি জীবনে যাদের দেখে অনুপ্রাণিত হয়েছেন, তাদের মতোই কিছু করার চেষ্টা করছেন। তিনি চান উনাকে দেখে অন্যরাও তার আশেপাশে কিছু করুক আর অনুপ্রাণিত করুক অন্যদের! তাহলেই পৃথিবী হবে আরো স্বাস্থ্যকর!

প্রফেসর মিরাজ রহমান
প্রায় সাড়ে তিন বছর প্রফেসর মিরাজ এর সাথে কাজ করার ফলে আমি উনার অনেক গল্পই জানতাম। তবে সেগুলি একসাথে করে মিলিয়ে দেখার সুযোগ ছিল এই টক!

২০১২ সালে কিংস এ যোগ দিয়ে ২০২১ এর অক্টোবরে প্রফেসর হিসেবে উন্নীত হয়েছেন! তাও আবার মেডিসিনাল কেমিস্ট্রি তে, যেখানে দিনের নির্দিষ্ট সম়সীমার বাইরে কাজ করলেও হেলথ অ্যান্ড সেফটি বিভাগের সাথে কথা বলতে হয়!

আমার বিশ্বাস, চারপাশে ভালো মানুষ, চমৎকার কর্মপরিবেশ, প্রোডাক্টিভ পিএইচডি পোস্ট-ডক টিম, খুব উদার কলাবোরেটর থাকলেও যা প্রফেসর মিরাজ কে এগিয়ে রাখে সেটা হলো,
১) উনি পরিশ্রম করতে পারেন সচ্ছন্দে;
২) নতুন কিছু করতে দ্বিধদ্বন্দ্বে ভোগেন না;
৩) খুব পরিবার কেন্দ্রিক হওয়ায় সামনে এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণায় কোন ঘাটতি থাকেনা।

টক শেষে ধন্যবাদ সূচক বক্তব্যে আমাদের বিভাগের প্রধান প্রফেসর ফোর্বস বলে গেলেন মিরাজ ইন্টারন্যাশনাল অলরাউন্ডার। তিনি কেমিস্ট্রি দিয়ে রোগের বিরুদ্ধে বল করে তুখোড় ফাস্ট বোলার এর মতো। আর শ্রেণীকক্ষে শিক্ষার্থীদের জ্ঞানের সীমানা পেরিয়ে যেতে সাহায্য ব্যাটসম্যান এর মতো!


											
Comments are closed.